সমপ্রেম !! সে তো খোলা আকাশ, নিষিদ্ধ কোনওদিন ছিল কি?



Love has no gender - compassion has no religion - character has no race

                                     
আপাতদৃষ্টিতে মনে হতেই পারে সমাজমান্য যে কোনও নিয়ম প্রজন্মভর বয়ে নিয়েই যেতে হবে।সেই সংস্কারেই সুপ্রিম আইনে ছাড়পত্র মিলে যাওয়া সমকামকে আমরা কি ছেড়ে কথা বলছি? হয়ত না।  মন-মানসিকতায় অপার্থিব রামধনু রং লাগছে কই! ভুলেই যাচ্ছি সমকাম আসলে সমপ্রেমও বটে। কাম- যৌনতার টক –স্বাদ নিচ্ছি, প্রেমের মিষ্টত্বটুকু বিস্মৃত হচ্ছে!

Image result for same sex image

সাফোঁকে মনে পড়ে? গ্রীসের ‘লেসবস’ দ্বীপের সেই নারী, যিনি চেয়েছিলেন পৃথিবী হবে কেবল ঈভের। ঈভেরাই একলা খাবে জ্ঞান বৃক্ষের নিষিদ্ধ আপেল। নারীতে নারীতেই গড়ে উঠবে প্রেমের ভুবন। অনেকেই মনে করেন এই ‘লেসবস’ থেকেই লেসবি এসেছে।
আসলেই, সমকামের ঊর্ধ্বে আছে সমপ্রেম।

Adam and Eve Gnostic Gnosticism Serpent

যীশুর ‘লাস্ট সাপার। ১৩ জন শিষ্য নিয়ে তিনি বসেছেন শেষ ভোজে- শিষ্যা নেই তো একজনও! মুখে তাঁর মানবপ্রেমের বাণী। এই মানবপ্রেম নারীর সঙ্গে নারীর, পুরুষের সঙ্গে পুরুষেরও বটে।অবিবাহিত যীশু যে  প্রেমের বাণী ছড়িয়েছেন বিশ্বজুড়ে তা সমপ্রেম’।এই প্রেম যৌন খিদের নয়। স্রেফ ভালোবাসার। মানুষকে ভালোবাসার।

Image result for last supper

যৌনতা চরম, প্রেম পরম।যৌনতা দেহ কেন্দ্রিক, প্রেম দেহাতীত, অবাধ।যা যীশুরও আগে বলেছেন গৌতম বুদ্ধ। সমপ্রেমকে ছড়িয়ে দিতেই তো মহিলা ও পুরুষদের জন্য আলাদা মঠ করেন তিনি। সেই মঠে বসে নারীরা উপলব্ধি করেছেন বিশ্বব্যাপী নারীর কষ্ট। পুরুষরা উচ্চারণ করেছেন মা-নিষাদ’।

যা অবলীলায় সমাজে স্বীকৃতি পেয়েছে। কোনও আইন –কানুনের ধার ধারেনি। এর কারণ একটাই, সমাজ তখন যৌনতাকে সন্তান জন্মের প্রক্রিয়া হিসেবে দেখেনি। যৌনতা অপছন্দের অথচ সন্তানের জন্ম পছন্দের, এই বোধ তখন ঘাড়ে বসে ঠ্যাং দোলায়নি। তাই সমপ্রেম সেই সময় থেকেই প্রকৃতির নিয়মে ছড়িয়েছে। আলাদা করে স্বীকৃতির লড়াইয়ে যেতে হয়নি।
অথচ, যে যীশু প্রেমে ভেদাভেদ রাখেননি, সেই যীশুর নাম ব্যবহার করেই বাইবেলের ব্যাখ্যা দিয়ে সমপ্রেমকে আইন বিরোধী বলেছিলো ইউরোপিয়ানরা। ভারত শাসন করতে এসেও  সেই আইন তারা প্রয়োগ করে । আর মানুষ প্রকৃতির নিয়মে চলে আসা সেই অবাধ প্রেমকে খাঁচা বন্দি করে। তাঁরা ভুলে যান চৈতন্যের বানী, যিনি রাধা ভাবে কৃষ্ণ পুজো –র কথা বলেছেন। অর্থাৎ, রাধা যিনি প্রেমিকার আইকন, যিনি প্রেমের সুখও দেবেন আবার দেহেরও, সেই রাধাকেই কৃষ্ণ রূপে পুজো করেছেন চৈতন্য। কারণ, এই পুজো শুধুই যে ভালোবাসার। কৃষ্ণকে ভালোবাসার, যে কৃষ্ণ রাধাতেই মগ্ন।এও সমপ্রেম।

Image result for mahaprabhu shree chaitanya

সুতরাং, সমপ্রেম না থাকলে ঈশ্বর পূজিত হচ্ছেন কই। আইন- জটে এই সমপ্রেমকে আবদ্ধ করে ব্রিটিশরা তাদের দাদাগিরি বজায় রেখেছিলো। সেই জট পেরিয়ে অবশেষে দেশে ৩৭৭ ধারা সংশোধিত হয়েছে।
 সমকাম বা সমপ্রেম এবার মনেও স্বীকৃতি পাক। ক্ষতিটা কোথায়। মনের গভীরে যে মন তাকে তো বোঝাতে হবে প্রেমের একটি অতি ক্ষুদ্র অংশ  কাম। সমকাম খন্ডিত, সমপ্রেম এক খোলা আকাশ।

Image result for khajuraho

আইনি রোদচশমা চোখ থেকে খুলে, চলুন,  এবার অন্তত  চোখ ফেরাই কোনার্ক বা খাজুরাহোর রামধনু রঙে। দেখি নারী ও নারীর যৌন বিভঙ্গ। দেখি পুরুষ-পুরুষের কাম মুদ্রা। শিল্প প্রেমের মধুরঙে নিজেকে রাঙাই, অন্যকে রাঙিয়ে দিই। লিঙ্গহীন পৃথিবীতে সমপ্রেম গড়ে তুলুক মানবপ্রেমের নতুন সংজ্ঞা।শেষ পর্যন্ত তো মানুষই ঈশ্বর, নয় কি!

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

এক কাপ কফিতে আমি শুধুই আমাকে চাই...

নষ্ট হচ্ছে এলিফেন্টা কেভ, হারাচ্ছে ইতিহাস